পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে হুমায়রা ইয়াসমিন হিমু নামে এক পরীক্ষার্থী। তার বাবা যুবলীগ নেতা মঙ্গলবার রাতে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার মরদেহ দেখতে আসা মানুষের ভীর ঠেলে বুধবার সকালে কান্নাজড়িত হৃদয়ে পরীক্ষা দিতে যায় হিমু। তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে।
হিমুর বাবা আব্দুল হাকিম (৪৮) তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে ভ্যান শ্রমিক সমিতির একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখছিলেন। মঞ্চ থেকে বক্তব্য দিয়ে বের হয়ে একটি হোটেলে চা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর গল্পের মাঝে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সহকর্মীদের সহায়তায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। এদিকে নিয়তি ও নিয়ম মেনে নিয়ে বাবার লাশ বাড়িতে রেখে বুধবার সকালে হিমুকে যেতে হয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে তেঁতুলিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য ছিলেন। তিনি শালবাহান ইউনিয়নের কালান্দিগঞ্জ পত্নীপাড়ার বাসিন্দা। পরীক্ষার্থী হুমায়রা ইয়াসমিন হিমু কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় ভাই জাহিদ হাসান জনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে পড়ালেখা করছে।
হিমুর দুই বান্ধু রুম্পা বলেন, বাবার মৃত্যুতে হিমু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। পরীক্ষা দিতে চাইছিল না। কিন্তু পরীক্ষা না দিলে ফল অকৃতকার্য হবে। তাই বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষার হলে নিয়ে আসা হয় তাকে। তবে দেখেছি, পরীক্ষার হলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হিমু। তার পরেও সে পরীক্ষা দিয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শওকত আলী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী হুমায়রা ইয়াসমিন হিমুর বাবার মৃত্যুর বিষয়টি আমরা পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পর জানতে পেরেছি। পরীক্ষা দেয়ার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে। কোনভাবে পরীক্ষা শেষ করে সে চলে যায়। আমরা চেয়েছিলাম, সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিক। কিন্তু তাকে শোকাহত হতে দেখেছি। তবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও দ্রুত পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি ফিরেছে পরীক্ষার্থী হিমু।

পঞ্চগড়/ ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪