ঢাকাবুধবার , ১ মার্চ ২০২৩

নওগাঁয় বিদেশী ফুল গ্লাডিওলাস চাষ করছেন কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা

উজ্জ্বল কুমার সরকার
মার্চ ১, ২০২৩ ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!
   
                       

উজ্জ্বল কুমার সরকার-নওগাঁ প্রতিনিধি:

বিদেশী ফুল ‘গ্লাডিওলাস’ চাষ হচ্ছে নওগাঁর সাপাহারে। ফুল টি চাষ হচ্ছে উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানার কৃষি খামার এর পলিনেট হাউজে। তিনি উপজেলা সদর এর অদূরে প্রায় ১৩০ বিঘা জমিতে ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নাম এ গড়ে তুলেছেন সমন্বিত কৃষি খামার। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বছর ব্যাপী নিরাপদ উচ্চ মূল্যের ফসল ও চারা উৎপাদন এ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগ এর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তার কৃষি খামার এ ২৫ শতক জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে একটি পলিনেট হাউজ। এই পলিনেট হাউজ এর পাঁচ শতক জমিতে যশোর থেকে ছয় হাজার টাকায় ১৫ শ’ পিস কন্দ (বাল্ব) কিনে পরীক্ষা মূলক গ্লাডিওলাস ফুল চাষ শুরু করেন সোহেল। কন্দ রোপণ এর মাত্র দুই মাসেই ফুল ফুটতে শুরু করেছে। খামার এ উৎপাদিত ফুলগুলো প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রির আশা করছেন তিনি।
সরেজমিনে পলিনেট হাউজ এ গিয়ে চোখে পড়ে লাল, সাদা, গোলাপি, বেগুনী, কমলা, হলুদ সহ নানা রঙের মেলা। সবুজ এ ঘেরা টিলার ফাঁকে ঢেউ খেলানো রঙের সারি। নজর কাড়া উজ্জ্বল এক সারি রং যেন আপন মনে ফুটে আছে। এই রং আসলে গ্লাডিওলাস ফুল এর নতুন মাটিতে পরীক্ষা মূলক চাষের সফল প্রকাশ। এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে গ্লাডিওলাস ফুল এর চাষ এই প্রথম। সাফল্য আসায় এই ফুল নতুন কৃষি সম্ভাবনার হাত ছানি দিচ্ছে। বাহারি রঙের নজর কাড়া গ্লাডিওলাস মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার ফুল। এই ফুল সংগ্রহ করার পর প্রায় ১০-১২ দিন ধরে রূপ ছড়াতে থাকে বলে এই ফুলের কদর বাড়ছে দিন দিন। বর্তমান এ সাপাহার বাজারে বিয়ে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান এর সাজসজ্জা এবং জাতীয় দিবস এ ফুলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে যশোর থেকে আসা ফুলে। অনেক দূরের উৎপাদন স্থান থেকে আসা এই ফুল পরিবহন এর সময় কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ফুল এর সৌন্দর্য আর ঠিক থাকে না। ফলে এই উপজেলায় ফুল এর দামও অনেক বেশি পড়ে।
জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক এর উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, স্থানীয় বাজার এ গ্লাডিওলাস ফুল এর চাহিদার কথা মাথায় রেখে যশোর থেকে কন্দ সংগ্রহ করে পরীক্ষা মূলক চাষ শুরু করি। বর্তমান বাজার এ প্রতিটি ফুল এর স্টিক ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফুল এর স্টিক ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে ৭ থেকে ৮ টাকায় পাইকারি বিক্রি হবে। বিশেষ দিন লোতে বড়তি দামও পাওয়া যেতে পারে। অনেক দর্শনার্থী বাগান এ ঘুরতে এসে পছন্দমত রঙের ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ফুল এর শোভা চিত্ত বিনোদন এর পাশাপাশি তাজা ফুল এর চাহিদা মেটাচ্ছে। এই ফুল চাষে অন্যান্য ফসল এর মত খুব বেশি পরিচর্যা করা লাগে না। একটি গাছ থেকে একটি ফুল এবং তিন থেকে চারটি কন্দ পাওয়া যায়। ফলে ফুল বিক্রির পাশাপাশি চারাও বিক্রি করেও আয় করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা পূরণসহ বাড়তি আয়ের চিন্তা থেকে এই ফুল চাষ শুরু করি। বর্তমান এ সব গাছ গুলোতে ফুল আসতে শুরু করেছে। গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রির পর কন্দ বিক্রি করা যাবে। ফলে এই ফুল চাষে চাষিরা আগ্রহী হলে খামার থেকে কন্দ বা চারাও সরবরাহ করা হবে বলেও জানান সোহেল রানা।
সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ শাপলা খাতুন বলেন, আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ এর লক্ষে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বছর ব্যাপী নিরাপদ উচ্চ মূল্য ফসল উৎপাদন এ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগ এর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সোহেল রানার কৃষি খামার এ ২৫ শতক জমির উপর একটি পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। মূলত পলিনেট হাউজ এ উচ্চ মূল্য ফসল উৎপাদন এ সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই উপজেলার মাটি গ্লাডিওলাস ফুল চাষ এর উপযুক্ত না হলেও সোহেল রানা তার পলিনেট হাউজ এ ফুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। মাটি উপযুক্ত না হলেও আগ্রহী চাষিরা কারিগরি ও চাষ বিষয়ক সঠিক পরামর্শ নিয়ে যথাযথ ভাবে মাটি তৈরি করে এই ফুল চাষ করতে পারবেন। ফলে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ এই অঞ্চলে চাষিদের সামনে আয়ের ১ নতুন সম্ভাবনা বলে এই কর্মকর্তা মনে করছেন।