ঢাকারবিবার , ৫ মার্চ ২০২৩

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র শবে বরাত,শায়েখ সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ

দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ
মার্চ ৫, ২০২৩ ৬:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!
   
                       

মহান আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদেরকে নেয়ামত হিসেবে যে কয়েকটি রাত দান করেছেন, পবিত্র শবেবরাত তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। বক্ষমান নিবন্ধে কোরআন ও হাদিসের আলোকে শবে বরাতের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

১.পবিত্র কোরআনে শবে বরাতঃ- মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন
إِنَّا أَنْزَلْناهُ فِي لَيْلَةٍ مُبارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ (٣) فِيها يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ (٤)
অর্থাৎ: আমি তা (কোরআন) নাযিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয় আমার আদেশক্রমে। (সুরা দুখান, আয়াত ৩-৪)
উক্ত আয়াতের ليلة مباركة তথা বরকতময় রজনী এর ব্যাখ্যায় হাশিয়াতু ছাবী আলা তাফসীরে জালালাইনে উল্লেখ করেন
(هي ليلة النصف من شعبان) انا ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء : الليله المباركة و ليلة البراءة وليلة الرحمة وليلة الصك
অর্থাৎ: লাইলাতুল মুবারাকা বলতে কারো কারো মতে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান কে বুঝানো হয়েছে। আর এই লাইলাতুম মুবারাকাহর রয়েছে চারটি নাম ১. লাইলাতুম মুবারাকাহ ২. লাইলাতুল বারাআত ৩. লাইলাতুচ্চাক ৪. লাইলাতুল রাহমাহ।

২. হাদীছ শরীফে শবে বরাত:-
ইমাম তিরমিজি (রাঃ) “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” সম্পর্কে তদীয় কিতাবে স্বতন্ত্রভাবে একটি অধ্যায় উল্লেখ করে হাদিস এনেছেন

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قال رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَخَرَجْتُ، فَإِذَا هُوَ بِالبَقِيعِ، فَقَالَ: «أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ»، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فَقَالَ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ»
[محمد بن عيسى، سنن الترمذي. رقم الحديث ٧٤٣]

অর্থাৎ: হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে রাসুলুল্লাহ ﷺ কে হারালাম কোথাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম যে তিনি জান্নাতুল বাকি মদিনায় কবরস্থানে অবস্থান করছেন। তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা ! তুমি কি ভয় পাচ্ছো যে আল্লাহ এবং তার রাসুল তোমার উপর অন্যায় করবেন? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আপনার কোন স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করছেন। অতঃপর তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাবারক ওয়া তা’আলা অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হন এবং বনু কালবের মেষপালের পশম পরিমাণের চেয়েও অধিক পরিমাণে তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন ।
(সুনান তিরমিজি হাদিস নং ৭৪৩)

উক্ত হাদীস সম্পর্কে সাইয়্যিদ আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহঃ আর আরফুশ শাজি কিতাবে লিখেন
باب ما جاء في ليله النصف من شعبان هذه الليلة ليلة البراءة- وصح الرواية في فضل ليلةة البراءة
অর্থাৎ: “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” অধ্যায়ে বর্ণিত এই রাত্রি হলো লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত) শবে বরাতের ফজিল সম্পর্কিত সমস্ত হাদিস সহীহ।

৩. সুনান ইবনে মাজাহ শরীফও অনুরূপ অধ্যায় এনে হাদিস উল্লেখ করেন-
عن علي بن أبي طالب رضي الله عنهقال. قال رسول الله ﷺ إذا كانت ليلةُ النِّصفِ من شعبانَ فقوموا ليلَها ، وصوموا نَهارَها ، فإنَّ اللَّهَ يَنزِلُ فيها لغُروبِ الشَّمسِ إلى سماءِ الدُّنيا ، فيقولُ : ألا من مُستغفِرٍ لي فأغفرَ لَه ! ألا مُسترزِقٌ فأرزقَهُ ألا مُبتلًى فأعافيَهُ ألا كذا ألا كذا حتَّى يطلُعَ الفجرُ
অর্থাৎঃ হযরত আলী রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) আসবে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, আল্লাহ তা’আলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর পরই পৃথিবীর আসমানে আসেন এবং তিনি আহ্বান জানাতে থাকেন । কোন ক্ষমা প্রার্থী নেই কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোন অভাব গ্রস্থ নেই কি ? কোন বিপদ গ্রস্থ নেই কি ? আমি তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবো। এভাবে শবে বরাতের ভোর রাত পর্যন্ত মহান আল্লাহর আহ্বান চলতে থাকে।
(সুনান ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২৬১)
এই হাদীসের সনদ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদিস ইমাম আবুল ফজল যাইনুদ্দিন ইরাকি রাঃ বলেন,
اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها واسناده ضعيف
অর্থাৎঃ যখন শাবানের মধ্যরজনীর আসে তখন রাতের বেলায় বন্দেগী করো এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। ইহার সনদ দ্বয়ীফ।

উল্লেখ্য যে, হাদিস দ্বয়ীফ হাদীসের উপর আমল করতে কোনো উসুল অনুযায়ী কোনো সমস্যা নেই ।
কেননা ইমাম মোল্লা আলী কারী মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবিহ কিতাবে দ্বায়ীফ হাদিসের হুকুম সম্পর্কে বলেন,
أجمعوا على جواز العمل بالحديث الضعيف، في فضائل الاعمال
ইমাম মুহাদ্দিছগন ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ফাদ্বায়েলে আমলের জন্য দ্বায়ীফ হাদিস দ্বারা আমল করা বৈধ। (মিরকাত ৩য় খন্ড ২২৬ পৃষ্ঠা)

কলেবর বড় হওয়ার আশঙ্কায় আলোচনা এখানেই ইতি টানলাম। পবিত্র শবে বরাত কুরআন এবং সুন্নাহ দ্বারা একটি প্রমাণিত বিষয় চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে একমাত্র বদ মাযহাবী আহলে হাদিস (নামধারী) ব্যতীত কেউ শবে বরাত সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত করেন নাই। চিন্তাশীলদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।আল্লাহপাক আমাদেরকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন, আমিন।

-শাইখ সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানী আল-আযহারী (হাফি.)