
(নীলফামারী প্রতিনিধি):-
নীলফামারীতে মোটরবাইকে হেলমেট ছাড়া মিলছেনা তেল। সড়কে প্রায়ই ঘটছে মোটরবাইক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মোটরবাইক চালকদের রক্ষা করতে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে নীলফামারীতে ”নো হেলমেট, নো পেট্রোল” কর্মসূচি শুরু করেছে জেলার ছয় থানা পুলিশ। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। তেল পাম্পের মালিকরা পুলিশের এই উদ্যোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১লা ডিসেম্বর) সকাল থেকে নীলফামারীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে চালু হয়েছে এ নিয়ম। জেলা শহরসহ উপজেলার ছয় থানায় জনসচেতনতা বাড়াতে চলছে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং। এছাড়াও ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখেও কার্যক্রমটির তদারকি করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ফলে হেলমেট ছাড়া পেট্রোল বিক্রির সুযোগ নেই ফিলিং স্টেশনগুলোর। এরই ধারাবাহিকতায় ডিমলা উপজেলায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে “নো হেলমেট, নো ফুয়েল” থানা পুলিশের প্রচারণা শুরু হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার সকালে জেলা পুলিশের নির্দেশনায় ডিমলা থানার অন্তভুক্ত সকল প্রেট্রোল পাম্পগুলোতে প্রচারনা চালায় ডিমলা থানা পুলিশ। মোটরবাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা, দ্রুতগতিতে মোটরবাইক না চালানো ও মোটরবাইক চালানোর সময় সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করার জন্যে মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ সময় ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বিশ্বদেব রায়, এসআই আবুল কালাম, আখতারুজ্জামান, জহরুল ইসলাম, জয়ন্ত, জগদীশ চন্দ্র রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলার কয়েকটি পেট্রোল পাম্পে ঘুরে দেখা গেছে, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও ব্যানার প্রদর্শন করা হয়েছে। কয়েকটি পেট্রোল পাম্পে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পেট্রোল পাম্পগুলোতে মোটরবাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা, দ্রুতগতিতে মোটরবাইক না চালানো ও মোটরবাইক চালানোর সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্যে চালক ও আরোহীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মোটরবাইক চালকরা জানান, চালক ও আরোহীদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার জরুরি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হেলমেট ছাড়া চলাচল করে অনেকেই হেলমেট ব্যবহারে বিরক্তি বোধ করছেন। চলমান পুলিশের বিশেষ অভিযান ও ফিলিং স্টেশনের কঠোরতার কারণেই এখন সবাই হেলমেট ব্যবহার করবেন। ডালিয়া তিস্তা ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল নিতে এসেছিলেন ইয়াকুব আলী। তবে হেলমেট না থাকায় পেট্রোল দেয়নি পাম্প কর্তৃপক্ষ। ইয়াকুব আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, নিয়মটি এভাবে চলমান থাকলে অবশ্যই আমরা সচেতন হব। আজ আমি সচেতন হয়েছি কাল আরেকজন এভাবে ঠিক হয়ে যাবে। দুর্ঘটনাও কমবে অনেকাংশে।
শুটিবাড়ির বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী মিঠু আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। দোকান থেকে বাড়ি যাবো পাম্পে তেল নিতে আসলাম তেল দেয়নি। পরে দোকান থেকে হেলমেট এনে তেল নিলাম। আসলে এটা আমাদের জন্য ভালো। আমাদের মোটরবাইক চালানোর সময় হেলমেট পড়া উচিৎ। সকলের ভালোর জন্যই পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। ডিমলা সদরের আলম ফিলিং স্টেশনের মালিক শাহ আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের মালিকদের নিয়ে পুলিশ সুপার মিটিং করেছেন। উদ্যোগটি অনেক ভালো। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশ প্রশাসনের পাশে আছি। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব। আমরা হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের কাছে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করবো না।
খালিশা চাপানী ইউনিয়নে তাশিন ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার এই প্রতিবেদককে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সকাল থেকে পুলিশের সদস্যরা সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছেন। কেউ হেলমেট না আনলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় মোট চারটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। নীলফামারী জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আমরা সর্বদাই মনিটরিং করছি যাতে করে কেউ হেলমেট বিহীন অবস্থায় মোটরবাইকে তেল কিনতে না পারে। নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান (পিপিএম) বলেন, আসলে দুর্ঘটনা এড়াতেই এই বিশেষ উদ্যোগ। আমরা গত ২৭শে নভেম্বর পেট্রোল পাম্প মালিকদের নিয়ে মিটিং করেছি। তারা সম্মতি দিয়েছেন ও আমাদের সহযোগিতা করছেন। এই উদ্যোগ নেওয়ার কারণ হলো- আমরা চাই দুর্ঘটনায় যেন সাধারণ মানুষের প্রাণ না যায়। এ নিয়ে আমরা প্রতিটা এলাকায় মাইকিং করছি। আমাদের পুলিশ সদস্যরা মনিটরিং করছেন।