ঢাকামঙ্গলবার , ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে নিজেকে পল্টান (সন্তান_সংসার_আর_সম্পর্ক)

মুহাম্মদ রাকিবুল হাসান (আজিজি)
ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!
   
                       

মুহাম্মদ রাকিবুল হাসান (আজিজি) :

শিশু বিশেষজ্ঞের মতে, সন্তানের সামনে পিতামাতাকে সবসময় পজিটিভ থাকতে হবে। তাদের মতে স্বামী বা স্ত্রীর এমন কোন আচরণ করা উচিত নয় যা শিশুর ওপর বিরূপ মনোভাব ফেলবে। কারণ একটি শিশুর আচরণিক এবং মানবিক বিকাশের গোড়াপত্তন হয় পরিবার থেকেই।
ডেফিনেটলি সত্য। আর এ সত্য অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের সোসাইটির কতজন আদর্শ কাপল আছেন, যারা সন্তানের সামনে নিজেকে পজিটিভ রাখতে পারেন?

আজিজি অফিসে, বাসে,মাঠে,হাটে,আত্বীয় কিংবা অনাত্বীয়ের সামনে সবাই পারফেক্ট কাপল সেজে থাকলেও পরিবারে এসে সন্তানদের সামনে আপনার আর মুখোশ পরে থাকা সম্ভব হয়না।শেষ সময়ে এসে আপনাকে খোলস ছাড়তেই হয়।তখন আপনার জুতার ভেতরে থাকা মোজার দূর্গন্ধের মত,পারফিউমে বন্দি বগলের ভ্যাপসা ঘ্রাণের মত বিশ্রীটা বেরিয়ে পরে। জি, শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। সন্তানের সামনে নিজেদের কে লুকিয়ে রাখা যায়না।অভিযোগের পাহাড় নিয়ে মিথ্যা হাসি বেশিক্ষণ ঠোঁটের কোণে শোভা পায়না। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের জন্য পারফেক্ট হওয়াটা পরম সৌভাগ্যের। কিন্তু এই সৌভাগ্যের ভাগ্য ১০% মানুষের কপালেও জোটেনা। পৃথিবীর সবচেয়ে আবেগপ্রবণ মানুষের জন্য জোটে আবেগহীন একটি কাঠখোট্টা সঙ্গী। তেমনি গড়গড় করে কথার ফুলঝুরির মত খই ফোটানো মেয়েটার ভাগ্যে মেলে লাজুক মুখচোরা স্বামী। সতী মেয়েটি জীবন কাটিয়ে দেয় চরিত্রহীন লম্পট স্বামীর সাথে। সরল মনের ছেলেটির কপালে লেখা থাকে কুটিল বদরাগী একটা মেয়ে। এরকম কত অমিল আর অসংগতি নিয়ে সংসার করে যেতে হয়।মানিয়ে চলতে হয় সন্তানের মুখ চেয়ে। অথচ খাবার অপছন্দ হলে কিংবা পোশাক ভালো না লাগলে আমরা রুচির পরিবর্তন করি।বদলে ফেলে নতুনত্বকে খুঁজি। কিন্তু জীবনের কঠিন এবং মূল্যবান একটি বিষয়কে আমরা জোর করে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি। এতে উপকার কতটা হয় জানিনা তবে সয়ে যেতে হয়। লেখালিখি করতে যেয়ে কত ঘটনার যে সাক্ষী হয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন কত কত মানুষের হেরে যাওয়ার গল্প শুনি।জীবনের হাহাকার বুঝতে পারি।স্বামী স্ত্রীর কত কত অভিযোগ, কত শত সমস্যা, কত হাজার না পাওয়ার গল্প দেখি। দিন শেষে সবই কি অর্থহীন?

দুটি মানুষ শুধু সমাজ আর সন্তানের কথা ভেবে শূণ্যের মাঝে থেকে বয়সের ঋণে বৃদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্কের আর কিছুই থাকেনা।
একই ছাদের নিচে জোড়াজুড়ি করে নিরুত্তাপ হয়ে শুয়ে থাকা।এরপর ধীরে ধীরে একদিন বিছানা ভাগ হয়ে যায়, মন ভাগ হয়ে যায়। সংসারের দায় নিয়ে চুপচাপ দিন পার করে দেয় এরা। ডাইনিং টেবিলের দুইপাশে মাথা ঝুকিয়ে চুপচাপ খেয়ে নেয় দূরাত্বীয়ের মত। অপরিচিতের মতোন, অচেনা মানুষের মতোন এরা নিজের আলাদা জগতে বুদ হয়ে থাকে।অভিমান আর হয়না তবে ঝগড়া হয় নিয়মিত। সন্তান এসব দেখে। বুঝতে পারে কোনোটা।কোনটাকে নিয়ে কল্পনার জগতে নিজের মত রং ছিটিয়ে ছবি আঁকে।বাবা মায়ের ভেতরের অভিযোগ, না বলা অভিমান তারা বুঝতে পারে না।প্রকাশ্যে যা দেখে তাই নিয়ে পক্ষপাত করে। কখনও মাকে কিংবা কখনও বাবাকে অপরাধী ভাবে। এত এত অভিযোগ বুকে চেপে কোন স্বামী বা স্ত্রীই পারেন না সন্তানের সামনে পারফেক্ট কাপল হয়ে উঠতে?

এজন্য দুটো জীবনের যখন ছন্দ শুরু হয় তখন একে অপরকে বোঝা খুব জরুরি। আর তাই সময় নিয়ে একে অপরকে বুঝতে হয়।বুঝতে দিতে হয়। অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে সন্তান হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এটা মারাত্মক একটি ভুল।কিছুই ঠিক হয়না।মানিয়ে চলার অভ্যাসে অভ্যস্ত হয় শুধু। পাশের মানুষটি বুঝে যায় অভিমানের দাম নেই যেখানে অভিযোগ মূল্যহীন সেখানে। একটি ভুল সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়া যে কত টা অন্যায় ও অপমানের সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো বোঝার ক্ষমতা নেই। তাই সময় থাকতে সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। আগেই ভাবা উচিত। সন্তানের সামনে আপনার সত্যটা প্রকাশ পাবেই পাবে।আপনার অভিযোগ, অভিমান,অবহেলা, ঝগড়া, রাগ,অনুরাগ সন্তানকে ভাবাবে। আপনার সন্তান আপনার ছায়া।সে যা দেখবে নিজে তা শিখবে এবং তার ভেতরে সেটাই লালন করবে।আপনি না চাইলেও এটা হবেই। তাই মানিয়ে নেওয়া আর মানিয়ে চলার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত শুরুতেই ।

আর যদি ভুল পথে চলাটা ভাগ্যের লিখন হয়ে যায়,তখন উচিত যত কষ্টই হোক আপনার পার্টনারকে সঠিক মূল্যায়ন করা।একে অপরের প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দেওয়া। বিয়ের পর আজীবন প্রেম টিকিয়ে রাখাটাই প্রেমের পূর্ণতা,তা নাহলে এক সঙ্গে থেকে শুধু সংসার থাকে,সন্তান থাকে ভালোবাসা থাকেনা। ভালবাসার সঠিক মূল্য চুকিয়ে দিতে জানলে ভালোবাসা অমর হয়। সন্তানের সামনেও নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
সন্তানের সামনে বাবা মা একে অপরকে শ্রদ্ধা করলে সন্তানও বাবা মাকে মূল্যায়ণ করতে শেখে। সন্তানকে নিজের আয়না বানাতে উজ্জ্বল আলোর যোগান দিতে হবে আপনাকেই।