ঢাকাশুক্রবার , ১৭ নভেম্বর ২০২৩

নাটোরে জাল ও ভূয়া সনদে প্রভাষক পদে চাকুরী, বাঁচতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

মো:বিপ্লব তালুকদার :নাটোর 
নভেম্বর ১৭, ২০২৩ ৮:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!
   
                       

মো:বিপ্লব তালুকদার :নাটোর

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হকের সনদ জাল ও ভুয়া। আর ওই সনদপত্র যাচাই না করে দ্রুত এমপিও’র জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর জন্য অধ্যক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হক। এতে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিককে ভয়ভীতি, প্রাণ নাশের হুমকি প্রদানসহ হয়রানিমূলক ও ভিত্তিহীন এবং কলেজের সুনাম নষ্ট করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে শহরের হাফরাস্তা এলাকায় একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিকের স্ত্রী বিথীকা সরকার। এসময় অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিকসহ শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিথীকা সরকার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নাটোর সদরের সাধুপাড়ার আয়েজ উদ্দীনের ছেলে মোজ্জাম্মেল হক কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরী পান। কিন্তু ১৩/১১ পরিপত্রে তাদের নিয়োগ বৈধ হিসাবে গন্য হলেও সরকার তাদের বেতন-ভাতা প্রদান করে না। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল এক পরিপত্রে সরকার তাদের বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। তারই আলোকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজ অধ্যক্ষ বেতন এমপিও’র জন্য প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হককে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সনদপত্র দাখিল করতে বলেন। কিন্তু প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হক তাঁর কাগজপত্র পারিবারিক সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে তা দাখিল করেন না। বার বার বলার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষের কাছে তাঁর কাগজপত্র ও সনদ দাখিল করেন তিনি। এ অবস্থায় অধ্যক্ষ তার সনদটি যাচাইয়ে এনটিআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে চায়। এতে প্রভাষক মোজাম্মেল হক আপত্তি জানিয়ে সনদপত্র যাচাই না করে দ্রুত এমপিও’র জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর জন্য অধ্যক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু তাঁর প্রদানকৃত কাগজপত্র এবং নিবন্ধন সনদ এনটিআরসিতে যাচাই না করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান অধ্যক্ষ। এতে কলেজ অধ্যক্ষকে ভয়ভীতিসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেয় মোজাম্মেল হক। পরে তার কাগজপত্র এবং নিবন্ধন সনদ এনটিআরসিতে যাচাইয়ে পাঠালে এনটিআরসি কর্তৃপক্ষ জাল ও ভুয়া বলে জানায়। একই সঙ্গে জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেন এনটিআরসি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একই নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেওয়ান আকরামুল হকও।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হক নিজেকে বাঁচানোর জন্য অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানি ও মানহানিকর এবং কলেজের সুনাম নষ্ট করতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিককে পুলিশ গ্রেফতার করেন। পরে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যথারীতি তিনি কজেজে রুটিন অনুযায়ী কাজকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হক কলেজ অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিককে ভয়ভীতিসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ার ঘটনায় গত ১১ অক্টোবর নলডাঙ্গায় থানায় সাধারন ডায়রী করা হয়েছে, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা মোতাবেক গত ১৪ নভেম্বর নলডাঙ্গায় থানায় প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হকের বিরুদ্ধে একটি জালিয়াতি মামলা রুজু করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে। কলেজের অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিককে নির্দোষ দাবী করে তিনি বলেন, তার স্বামীর বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারনার অভিযোগে মামলা দায়েরকারী মোজ্জাম্মেল হক কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরী দেয়ার জন্য কোন টাকা দেননি। ওই শিক্ষকের একটি সনদ জাল থাকায় অধ্যক্ষ তার বেতন করতে পারেননি। আর তাই জাল ও ভূয়া সনদ থেকে বাঁচতে হয়রানিমূলক ও ভিত্তিহীন এবং কলেজের সুনাম নষ্ট করতে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। আদালতে বাদি মোজাম্মেল হকের আইনজীবি ২০ লাখ নেওয়ার কোন প্রমাণপত্র দাখিল করতে পারেননি। তাই বিজ্ঞ আদালত তার অধ্যক্ষকে জামিন দিয়েছেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান। এদিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী প্রভাষক মোজাম্মেল হক দাবী করেছেন, তিনি অধ্যক্ষকে দুই বারে নগদ ২০ লাখ টাকা প্রদান করেছেন। তার কোন সনদ জাল নয়। অধ্যক্ষের দূনীতি নিয়ে মুখ খোলায় তারা উভয়ে মিলে তার (মোজাম্মেল হকের) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব কথা বলেছেন বলে দাবী করেন। উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর নাটোর আমলি আদালতে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেন প্রভাষক মোজ্জাম্মেল হক। পরে সোমবার রাতে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামাণিককে তাঁর নিজ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে আদালত থেকে তাকে জামিন দেয়া হয়।