
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
এ বছর নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মা ও মেয়ে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মা মারুফা আক্তার। তবে ফেল করেছেন মেয়ে শাহী সিদ্দিকা। আজ ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, মারুফা আক্তার ৪ দশমিক ৩৮ পেয়ে পাস করেছেন। মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবং মারুফা আক্তার একই কলেজের বিএম শাখা থেকে পরীক্ষায় বসেছেন। মারুফা আক্তার বলেন, ‘বিয়ের ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। একপর্যায়ে স্বামীর উৎসাহে বড় মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করি। সমাজে আর দশটা মানুষের মতো যাতে নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি, সে কারণেই এই বয়সে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। এইচএসসি পাস করে কষ্ট সার্থক হয়েছে। ইচ্ছা আছে এখন দেশের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওযার। তবে মেয়ে শাহী উত্তীর্ণ না হওয়ায় মন খারাপ।’ মারুফা জানান, ২০০৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কিন্তু পরীক্ষার আগেই পরিবার থেকে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। এরপর কেটে গেছে ১৫ বছর। একে একে জন্ম হয় দুই ছেলে ও দুই মেয়ের। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন তিনি। এবার মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন। এদিকে মারুফার পাসের খবরে দারুণ খুশি পরিবারের সবাই। ভালো ফল করায় তাঁকে বাহবা দেন সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষকেরা। মারুফার বাবার বাড়ি উপজেলার নাউতারা গ্রামে। বিষয়ে হয় একই উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যাঝার গ্রামের সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। স্বামী পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। তাঁদের ছেলে-মেয়ের মধ্যে শাহী সিদ্দিকা বড়। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণি, তৃতীয় ছেলে অষ্টম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা, ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারমেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা, ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তার ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছি। বেশ আনন্দ অনুভব করছি। সে যত দূর পড়াশোনা করতে চায় পড়বে। আমার সহযোগিতা থাকবে তার প্রতি। মা ও মেয়ে একসঙ্গে পাস করলে আরও ভালো লাগত।’ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মারুফা একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়সের কোনো বাধা নয় তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন। মারুফা আক্তারের এমন সাফল্য অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।’