
মোঃ ছিদ্দিক -ভোলা প্রতিনিধি
আমি আমার স্বামীকে চাই। আমি নোমানকে ফিরে পেতে চাই। আমার স্বামী পুলিশের ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারে। আমার স্বামী নদী থেকে উপরে ওঠতে বারবার আকুতি করলেও নির্দয় পুলিশ তাকে ওঠতে দেয় নি। জোয়ারের স্রােতে মেঘনায় ডুবে সে নিখোঁজ হয়। জেলেরা তাকে নদী থেকে ওঠাতে চাইলেও পুলিশ তাদেরকে বাঁধা দেয়। পুলিশ জেলেদের গায়ে হাততোলে, মারে। আমার স্বামীকে নদী থেকে ওঠতে দিয়ে পুলিশ বিচার করত। তারা তাকে আটক করত? আমার স্বামীকে ইটপাটকেল মেরে যেই পুলিশ মেরেছে আমি সেই পুলিশের বিচার চাই। আমি আমার স্বামীর লাশ এক নজর দেখতে চাই। আমার আদরের সাত বছর বয়সী একমাত্র সন্তান আবিরের এখন কি হইবে? আবির দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। উড়ে কে দেখবে? ছেলেকে বুকে জড়িয়ে রেখে নিখোঁজ নোমানের স্ত্রী এক সন্তানের জননী নাসরিন আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বারবার বুকফাটা আর্তনাদ করছিলেন। নাসরিনের কান্নায় মেঘনা পাড়ের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
গত বৃহস্পতিবার ২৪ নভেম্বর থেকে দৌলতখান পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাছঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদী তীরে বসে নদীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্বামীহারা নাসরিন। বাবা হারা এতিম ছেলে আবির এখনও বুঝতে পারেনি তার বাবা আর কখনও ফিরে আসবেনা। কেহ জিঙ্গেস করলে আবির শুধু বলছে পুলিশ আমার বাবাকে ইট মেরেছে, আমার বাবা নদী থেকে উঠতে পারে নি। বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশায় মায়ের সাথে নদী পাড়ে বসে কাঁদছে অবুজ ছেলে আবির।
বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ ও আত্মীয় স্বজনরা নদী তীরে এসে নোমানের খোঁজে ভীর করছে। লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় রাতদিন প্রহর গুণছে সাধারণ মানুষ। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটিয়েছে দৌলতখান থানার পুলিশ। এমন ঘটনাটি ভোলার দৌলতখানের থানা সংলগ্ন মাছঘাট এলাকার মেঘনা নদী তীরে ঘটেছে। ঘটনার বিবরণ বর্ণনা করে প্রত্যক্ষদর্শী ও নোমানের স্বজনরা জানায়, নোমান মাছঘাটের একজন শ্রমিক ছিলেন। পৌর কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনের আড়তে সে কাজ করত। বৃহস্পতিবার দুপুরবেলা কাজ না থাকার সুযোগে নদীপাড়ে পাথরের স্তুপের আড়ালে বসে তাস খেলছিল সে। এ সময় পুলিশ তাকে ধাওয়া করলে সে ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। নোমানের বাড়ি উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সুকদেব স্কুল সংলগ্ন খনকার বাড়ি। মাছঘাটে ট্রলার থেকে মাছ উঠা নামার কাজ ছিল তার। দৈনিক মজুরী পেয়ে তা দিয়ে অভাবের সংসার চালাত সে।
গত তিনদিনেও দৌলতখান ফায়ার সার্ভিস ও বরিশাল কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল রাতদিন ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে নোমানের লাশ উদ্ধার করতে পারে নি। শুক্রবার দুপুরবেলা পর্যন্ত কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল নিখোঁজ নোমানকে উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় তারা উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে দৌলতখান থানার আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজড করে ভোলা পুলিশ লাইন্সে নেয়া হয়েছে। গত দুইদিনে নিখোঁজের ঘটনায় এপর্যন্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই স্বরুপ কান্তি পাল এবং এএস আই সোহেল রানা, কনেস্টেবল রাসেল ও সজিবসহ ৪ পুলিশকে ক্লোজড করা হয়েছে। নিখোঁজ নোমানের স্বজনরা জানায়, এ ঘটনায় এখনও পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়নি। লাশ উদ্ধারের পর মামলার প্রস্তুতি নেয়া হবে। এদিকে এলাকার সচেতন মহল ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।