ঢাকাশনিবার , ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

নড়াইলে প্রেমের ঘটনায় ছেলেকে আটকিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং ব্যাবসায়ী পরিবারকে মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ

মোঃ আজিজুর বিশ্বাস,
জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!
                       

মোঃ আজিজুর বিশ্বাস,স্টাফ রিপোর্টার।

লোহাগড়ায় ৩ লাখ টাকা সহ স্বর্ণালংকার ছিনতাইয় এর পর পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাবসায়ীর ছেলেকে ঘরে আটকিয়ে জিম্মি করে মারপিট করে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলায় ব্যবসায়ির পরিবার কে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে। ভূক্তভোগী ব্যবসায়ি পরিবারসহ স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া বাজারের একজন প্রতিষ্ঠিত ছিটকাপড় ব্যবসায়ী ও বাজার সংলগ্ন মদিনাপাড়ার বাসিন্দা মোঃ আমির হোসেন। অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে তার। প্রায় প্রতিদিনই পিতার ছিটকাপড় এর দোকান সরদার ক্লথ স্টোরে বসেন ছেলে মোঃ রায়হান(২৪)। ব্যবসার কাজে বাবাকে সহযোগিতা করেন তিনি।

ব্যবসার সুবাদে দোকান থেকে রায়হান এর সাথে পরিচয় হয় ইতনা গ্রামের মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর মেয়ে শাপলা খানম দিলরুবার (২৪) সাথে। শাপলা খানম মাঝে মাঝে ওই দোকান এ নানা অজুহাতে আসতেন। বন্ধুত্ব থেকে তাদের মধ্যে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই কিছুটা প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে উঠে । ফোনেও মাঝে মাঝে কথা হতো তাদের। যে কারনে রায়হান কখন কোথায় যাচ্ছেন সে খবর শাপলা খানম জানতেন।
গত বছর ২৩ নভেম্বর বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর টাকা তোলবার জন্য রায়হান ইতনার রাধারনগর বাজারে যান। সেখানে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে পাওনা ৩ লাখ নগদ টাকা আদায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ইতনা গ্রাম এর দেলোয়ার হোসেন এর বাড়ির সামনের রাস্তায় পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ইতনা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, লালন মোল্যা, ইউনুস শেখ সহ ৭-৮ জনে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে রায়হান কে জোর করে শাপলা খানমের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে এবং মারপিট করে।

এসময় তারা নগদ ৩ লাখ টাকা সহ স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এঘটনা গ্রামে জানাজানি হয়ে যায়। পরিবেশ ঘোলাটে হতে পারে ভেবে শাপলা রহমান এর পরিবার সহ আত্মীয় স্বজনরা ছিনতাইয়ের ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে জোর করে রায়হান কে শাপলার সাথে ৫ লাখ টাকা কাবিনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি বিবাহ দিয়ে দেয়। লোক লজ্জার ভয় ও পরিবারের ভয়ে রায়হান প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখলেও পরবর্তীতে গত বছর ৮ ডিসেম্বর শাপলা খানমের পরিবার হয়রানি করতে পারে মর্মে লোহাগড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রায়হান। যার নং- ৩৬২। পরবর্তীতে গত ৮ ডিসেম্বর রায়হান ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন এর ৭(১) ধারামতে ঘটনাক্রমে বিয়ে করা স্ত্রী শাপলা খান কে তালাকের নোটিশ প্রদান করে।

এরপর রায়হান গত ১১ ডিসেম্বর বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক এর কার্যালয় নড়াইলে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে তালাকের চূড়ান্ত ঘোষনা সংক্রান্ত নোটিশ প্রদান করে। এছাড়াও রায়হান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর এ্যাডভোকেট মোঃ ইমরুল হাসান এর মাধ্যমে গত ১১ ডিসেম্বর শাপলা খানম দিলরুবাকে দেনমোহর সহ খোরপোশ নেবার জন্য লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে। এর পর গত ২ জানুয়ারি রায়হান বাদী হয়ে শাপলা খানম দিলরুবা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন সহ ৬ জনের নামে বাদীর বাড়িতে ২১ ডিসেম্বর উপস্থিত হয়ে অনধিকার প্রবেশ, আসবাবপত্র ভাংচুর ও হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে শাপলা খানমের পরিবার লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট রায়হান এর নামে অভিযোগ দায়ের করেন। গত ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর দপ্তরে অভিযোগ বিষয়ে শুনানী গ্রহণ করা হয়। ইউএনওর শুনানী শেষে সিদ্দান্ত মোতাবেক ইতনা ইউপি চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে দু পরিবারে আপোসরফার প্রস্তাবে সম্মত হলেও মেয়ে পক্ষ পরবর্তীতে চেয়ারম্যান এর ডাকে সাড়া দেয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি ব্যবসায়ি মোঃ আমির হোসেন ইতনা ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যানের নিকট দ্রুত অভিযোগ নিস্পত্তির আবেদন করেন।

কিন্তু চেয়ারম্যানের ডাকে সাড়া না দিয়ে শাপলা খানম বাদী হয়ে গত ২৫ জানুয়ারি রাতে লোহাগড়া থানায় ব্যবসায়ি মোঃ আমির হোসেন, ছেলে মোঃ রায়হান, মোঃ রিফাত ও রিফাত এর স্ত্রী রুকাইয়া জান্নাতের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌতুক এর জন্য মারপিট সহ সহায়তা করবার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। যার নং- ১৫। ব্যবসায়ি মোঃ আমির হোসেন অভিযোগ করেন, আমার ছেলে শাপলা খানম কে তালাক প্রদান এর পরই আমার পরিবার কে হয়রানি করতে ওই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ইতনা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সিহানুক রহমান বলেন, গ্রাম্য আদালতে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য চেষ্টা করেছি কিন্তু মেয়ে পক্ষ আসেনি। এবিষয়েলোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসির উদ্দীন বলেন, শাপলা খানমের মামলাটির তদন্ত চলছে। সঠিক তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হবে।