মাসুম বিল্লাহ, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একমাস পেরিয়ে গেলেও সম্পূর্ণ বই স্কুল ও মাদ্রাসায় না পাওয়ায় ক্লাসে শিক্ষকরা মুখে মুখে বলে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন নতুন বই। পরে বাসায় গিয়ে পড়তে না পেরে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এ কারনে ক্লাসে উপস্থিত হতেও আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থী। ধীরে ধীরে ক্লাসশূণ্য হতে শুরু করছেন। সরে জমিনে গিয়ে শেরুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষর্থীরা জানান, আমাদের পাঠ্যবই নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। তাই প্রথম প্রথম বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পরে হয়ত আর এই কষ্ট হবে না।
পরীক্ষার পর ভেবেছিলাম আগের মতো বই হয়ত থাকবে, কিন্তু না। নতুন পাঠ্যক্রম হলো আমাদের, তাই নতুন ক্লাসে উঠে নতুন বইয়ের সাথে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে । আগে বাড়ির কাজ থাকত কিন্তু এখন বাড়ির কাজ কম থাকে। আগে যেসব বইয়ের নাম শুনেছি ষষ্ঠ শ্রেণিতে, সেই বইও পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। নতুন ক্লাসে পেলাম নতুন নতুন নাম। বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি নতুন এসেছে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি। এসব নতুন বই আমাদের থেকে শুরু করা হলো। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরা এখনো সব বই হাতে পেলাম না। জানুয়ারির একমাস পার হয়ে গেল! বই এখনো স্কুুলে না আসায় নাকি পাইনি আমরা। আমাদের সময় থেকে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়েছে। সেই দিক থেকে বলতে পারি আমরা নতুনের সাথেই বেড়ে উঠব। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে নতুন শিক্ষাক্রমে অংশ নিচ্ছি আমরা। শেরুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী লিমা ও ছাত্র জাকারিয়া জানান, মাল্ট্রিমিডিয়া পদ্ধতিতে আমাদের পড়ানো হলেও বাসায় বই পড়তে না পেরে শিক্ষার ব্যঘাত ঘটছে। ঠিকমত পড়া দিতে পারছিনা।
শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদ্রসার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমা রহমান ও মাহমুদুল হাসান জানান, এখন পর্যন্ত একটিও বই হাতে পায়নি। ক্লাসে শিক্ষকরা মুখে বলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এতে আমরা তেমন উপকৃত হতে পারছিনা। বই কাছে না থাকায় তেমন বুঝতে পারছিনা। বাড়িতে গিয়েও পড়তে পারিনা। এতে করে আমাদের ক্লাসে আসার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এবার বলতে গেলে সব বইয়ের নামই পাল্টে গেছে। ক্লাসে শিক্ষকরা মুখে মুখে বলে আমাদের নতুন বই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তবে পুরাতন বই দিয়ে আমাদের পড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিকাংশ বই বিতরণ করা হতো। তবে এবছরের প্রথম দিন সব শ্রেণীর বই বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর গনিত, ইসলাম ধর্ম শিক্ষা, হিন্দুধর্ম শিক্ষা, ইতিহাসও সামাজিক বিজ্ঞান। ৭ম শ্রেণীর বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত, আনন্দপাঠ, ইংরেজী গ্রামার, চারু ও চারুকলা, কৃষি শিক্ষা। ৮ম শ্রেণীর ৯ম শ্রেণীর কিছু বিষয়ের বই না আসায় বিতরণ করা হয়নি।
এছাড়া মাদরাসায় ৭ম শ্রণীর একটিও বই পায়নি, এবং ৯ম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভারেগ ৩টি বই, সাধারণ বিভাগের একটিও বই না আসায় বই বিতরণ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদ্রসার অধ্যক্ষ মাও: মো: হাফিজুর রহমান বলেন বলেন, ৭ম শ্রেণীর কোন বই আমরা পাইনি এবং ৮ম কিছু ও ৯ম শ্রেণীর শুধুমাত্র ৩টি বিষয়ের বই বিতরণ করা হয়েছে। আংশিক বই পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বইয়ের খোঁজ খবর নিচ্ছে, কিন্তু বই হাতে না পাওয়ায় তাদেরকে দিতে পারছি না, এছাড়া ক্লাশেও ব্যাঘাত ঘটছে পাশাপাশি শিক্ষার্থী শূণ্য হচ্ছে ক্লাস। শেরুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের শিক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ শ্রেণী ও ৮ম শ্রেণীর কিছু বই পাওয়াতে শিক্ষার্থীদের পড়া লেখায় মনোযোগ আনতে কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়াও আমরা মাল্ট্রিমিডিয়া পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হলেও বাসায় বই পড়তে না পেরে শিক্ষার ব্যঘাত ঘটছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজমুল হক জানান, ঢাকা থেকে আমাদের বই দেয়নি, এজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছাত পারিনি। তবে অতিদ্রত এ সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।