
কাশিমপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি
গাজীপুরের কাশিমপুরে জিরানী বাজার এলাকায় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টি কাশিমপুর থানা কমিটির সভাপতি আলফাজ উদ্দিন নামের এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে। স্হানীয় সূত্রে জানা যায়,আলফাজ উদ্দিন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের মাধবপুর(পানিরশাইল)এলাকার স্হানীয় বাসিন্দা, তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ইউনিয়নের জিরানী শাখা অফিস বসিয়ে নানা ভাবে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।জিরানী বাজার এলাকার স্হানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,তাকে আমরা সারাদিন দেখি ওই শ্রমিক অফিসে কিছু আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনকে কমিটিতে রেখে অটোরিকশা,ইজিবাইক ও চন্দ্রা নবীনগর মহাসড়কের জিরানী বাজারের পূর্ব পাশের লেন দখল করে অটোরিকশা,ইজিবাইক,পিকআপ ভ্যান, ট্রাক স্ট্যান্ড বানিয়ে প্রায় ১শত গাড়ী পার্কিং করে রাখা হয়েছে।এছাড়াও প্রতিটি গাড়ী থেকে প্রতিদিন ৫০টাকা জিপি ও প্রতিটি পিকআপ ভ্যান থেকে প্রতিমাসে ১হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন আলফাজ উদ্দিনের নিয়োগ কৃত কর্মচারী হাবিব। উক্ত বিষয়ে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের চালকদের কাছ থেকে জানা যায় অসংখ্য অটোরিকশা ও ইজিবাইক থেকে মাসিক চাঁদা হিসেবে ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে। আর এই চাঁদা আদায়ের জন্য কর্মচারীদের বেতন ভুক্ত করে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায় জিরানী বাজার বঙ্গমার্কেটের ১নং বিট পুলিশিং কার্যালয়ের আনুমানিক ৫০গজ পাশেই চাঁদা আদায়ের শ্রমিক অফিসটি অবস্থিত। প্রতিনিয়ত সেই অফিসটিতে চাঁদা আদায়ের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের বিচার-শালিস বসিয়ে জরিমানা আদায় করার অভিযোগও রয়েছে শ্রমিক অফিস কমিটির সভাপতি আলফাজ উদ্দিন এবং সাধারন সম্পাদক গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ১নং ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক শামছুল আলম গায়েন বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনিও সে অফিসে বসছেন প্রতিনিয়ত আর সরকারদলীয় পদ পদবির আড়ালেও তিনি চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। শামছুল আলম গায়েনের সাথে প্রভাবশালী মহলের সখ্যতা থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে টাকার বিনিময়ে আঁতাত গড়ে উঠায় চাঁদাবাজী বন্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না।এমনকি কমিউনিটি পুলিশের পোশাক পরেও লাইনম্যানদের চাাঁদাবাজী করতে দেখা যায়। আর এ জন্য প্রশাসন ও নীরব দর্শকের ভূমিকা থাকার অভিযোগ উঠেছে। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় জিরানী বাজার বাসস্ট্যান্ড,চক্রবর্তী,মাধবপুর, পানিশাইল,হাতিমারা,ভবানীপুর থেকে হাজারের অধিক অটোরিকশা,ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচল করে। কাশিমপুরের জিরানী বৃহৎ স্ট্যান্ড থেকে বটতলা,বিগবস,ভবানীপুর, হাতিমারা,এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
জিরানী বাজার এলাকায় এসব যানবাহন চলাচল করে থাকে। চলাচলকারী তিন চাকার প্রতিটি যানবাহন থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। টাকা উঠানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিটি যানবাহন থেকে প্রতিদিন ১০-৩০ টাকা করে উঠানো হয় বলে জানান বিভিন্ন অটোরিকশা,ইজিবাইকের চালকরা। সজিব নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন,আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন অর্থ আদায় করে থাকে আর না দিলে সড়কে গাড়ি চালাতে দেয় না। জিরানী স্ট্যান্ডে অবস্থানকারী রাজু(ছদ্মনাম)নামে আরেক চালক জানান,মানিক ও বেলাল আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে নেয়। কবির নামের আরেকজন বলেন,আমরা গরিব মানুষ পেটের দায়ে অটোরিকশা চালায় মালিকের কাছ থেকে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে আসি আর দিন শেষে গাড়ির মালিকদের ভাড়া পরিশোধ করার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। আমরা চাঁদা দিতে না চাইলে ও জোর করে আদায় করে না হলে এ রাস্তায় আমাদের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। চাঁদা দেওয়ার ফলে নিরীহ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াও আদায় করা হয় দ্বিগুণ থেকে তিনগুন পর্যন্ত। সাধারণ মানুষ এবিষয়ে বলেন,চাঁদা আদায়ের ফলে একদিকে আমাদের ভাড়াও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ,অন্যদিকে রাস্তায় পার্কিংয়ে ফলে আমরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছি না। টাকা উঠানোর দায়িত্বে থাকা এক লাইনম্যান স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন,আমরা রাস্তায় কষ্ট করি বিধায় চালকরা ইচ্ছে করেই ১০-২০ টাকা আমাদের দেয়।আর শ্রমিক অফিসে কর্মচারীসহ প্রায় ৭-১০ জনের একটি কমিটি আছে যাদের মাসিক বেতন চাঁদা আদায় থেকে মাস শেষে প্রত্যেককে দেওয়া হয়।এছাড়াও প্রতিদিনের চা,পান,সিগারেট বিল ও অফিস ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে অগণিত টাকা ব্যয় হয়।এবং সকলের বেতনের পর সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উচ্ছিষ্ট টাকা দু’জনে ভাগ করে নেওয়ার গুঞ্জন ও জিরানী বাজার এলাকায় শোনা যায়।
পথচারী ও জিরানী বাজার এলাকার শিল্প কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ মহাসড়ক দখল করে শত শত ট্রাক,বাস,পিকআপ,লরি,ইজিবাইক, অটোরিকশা পার্কিং করে রাখায় আমরা প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হিমশিম খাচ্ছি এ যেনো মগের মুল্লুক, জিরানী বাজার এলাকায় মহাসড়কে এসব গাড়ী পার্কিং করে রাখায় মহাসড়ক সংকোচিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কল কারখানার শ্রমিকসহ চলাচলরত পথচারীরা আবার অনেকেই দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তির দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,আমরা জিরানী বাজার স্ট্যান্ড থেকে লাইনম্যানদের জন্য অটোরিকশা-ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে থাকি,স্থানীয় প্রশাসন সবই জানে। এব্যাপারে জিরানী বাজার শ্রমিক ইউনিয়ন শাখা অফিসের সভাপতি আলফাজ উদ্দিনের সাথে মুঠো ফোনে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নানান ধরনের ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনটি কেটে দেন। এবিষয়ে গাজীপুর মোট্টোপলিটল পুলিশের কাশিমপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ রাফিউল করিম রাফি বলেন,অতি দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।