মোঃ আনোয়ার হোসেন
ডিমলা, নীলফামারী
উত্তরের জনপদের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। এতে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বল্প খরচে অধিক ফলন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, ভুট্টা চাষে দরিদ্র কৃষকেরা আর্থিকভাবে সফল হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নাউতারা, বালাপাড়া, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানী ,পশ্চিম ছাতনাই, পুর্ব ছাতনাই, গয়াবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠ ভুট্টাখেত। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ক্ষেত গুলোতে পানি ও কীটনাশক দেওয়া এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ক্ষেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কাজ করতে দেখা যায়।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লাভজনক হওয়ায় এবং স্থানীয় মাটিতে ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। চলতি বছর আরও বাড়বে। মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভুট্টা চাষ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
ঝুনাগাছ চাপানী এলাকায় ভুট্টা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকার যেসব জমিতে পূর্বে অন্যান্য ফসল চাষ করা হতো, সেই সব জমিতে এবার ভুট্টা চাষ হচ্ছে। ভুট্টার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক কম । এ ছাড়া সব সময় বাজারে ভুট্টার দামও বেশি থাকে। এ জন্য কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ভুট্টাচাষি গয়াবাড়ী গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, এই এলাকার সিংহভাগ জমিতে আলু উৎপন্ন হয়। কিন্তু মৌসুমজুড়েই আলুর বাজারদর ওঠানামা করায় চাষিরা এবার খুব একটা লাভ করতে পারেননি। তাই এবার অনেকেই ভুট্টার চাষ করছেন। আশা করি ফলনও বাম্পার হবে। ন্যায্য দাম পেলে কষ্ট সার্থক হবে।
বালাপাড়া এলাকার আরেক কৃষক যোগেশ চন্দ্র রায় জানান, ভুট্টা চার মাসের ফসল। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করতে বীজ, জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক, খেতের আগাছা পরিষ্কার, ভুট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রির উপযোগী করা সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে খরচ প্রায় ১১ হাজার টাকা। আর বাজারে ভালো দাম থাকলে বিক্রি হয় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ অল্প সময়ে অধিক লাভ। এ জন্য ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মীর হাসান আল বান্না বলেন, মাত্র পাঁচ বছর আগেও ডিমলা উপজেলায় এত ভুট্টা চাষ হতো না। এখন এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ভূট্রা চাষিদের প্রত্যেককের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও স্যার বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমান চলতি মৌসুমে ৮৫ ভাগ ভূট্রা রোপন শেষ হয়েছে। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য, মাছের ফিট, মুরগির ফিটসহ দেশের বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে ভূট্রার চাহিদা প্রচুর রয়েছে আশাকরি কৃষকেরা এবারও ন্যায্য দাম পাবে। এখন লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।