উজ্জ্বল কুমার সরকারঃ

 

আজ ০৫ জানুয়ারি ছড়াসাহিত্যে প্রবাদ-প্রতিম ব্যক্তিত্ব সুকুমার বড়ুয়ার জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবসা।

সুকুমার বড়ুয়া বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে একজন প্রবাদ-প্রতিম ব্যক্তিত্ব। সুদীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে শুধু ছড়া লিখে তিনি হয়েছেন এ যাবতকালের সবচাইতে জনপ্রিয় ছড়াকার; হয়েছেন ‘ছড়ারাজ’, ‘ছড়াশিল্পী’, ‘ছড়াসম্রাট’ নানা অভিধায় অভিষিক্ত।

সহজ-সরল কথায় ও ভাষায়, ছন্দ ও অন্ত্যমিলের অপূর্ব সমন্বয়ে তাঁর ছড়া যেমন শিশুতোষ, উদ্ভট, ব্যঙ্গাত্মক, হাস্যরসাত্মক, কৌতূহলোদ্দীপক, নৈতিক শিক্ষামূলক তেমনি গণমুখী, রাজনৈতিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ।

সুকুমার বড়ুয়া বাংলা ছড়া সাহিত্যে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন বৈচিত্র্য, সরস উপস্থাপনা, ছন্দ ও অন্তমিলের অপূর্ব সমন্বয়ে। তার ছড়া একেবারেই স্বতন্ত্র।

সুকুমার বড়ুয়া বাংলা ছড়ায় প্রাঞ্জল ভাষায় আটপৌরে বিষয়ও ছড়ায় ভিন্নমাত্রা দিয়ে থাকেন তিনি । তার ছড়া যেমন বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ম, শাণিত ; তেমনি কোমল।

আজ এ বাংলার ছড়াসাহিত্যের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে যদি কারো নাম করতে হয়, তা হলে ‘সুকুমার বড়ুয়া’র নামটিই বেশি সমর্থন পাবে। কিংবদন্তি তুল্য এ ছড়াকারের আজ জন্মদিন।

১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে তার জন্ম। বাবা সর্বানন্দ বড়ুয়া। মা কিরণ বালা বড়ুয়া।

বাবা-মায়ের তিনি ১৩ তম সন্তান। সুকুমার বড়–য়ার পড়াশোনার হাতেখড়ি মামাবাড়ির স্কুলে। এর পর বড়দিদির বাড়িতে এসে ‘ডাবুয়া স্কুলে’ পড়েন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। আর এগোয়নি। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় অর্থনৈতিক সংকটে।

অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করেছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য ফলমূল, আইসক্রিম, বুট ও বাদাম ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করেছন।

১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে চৌষট্টি টাকা বেতনের চাকুরী হয় তার৷ ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

সুকুমার বড়ুয়ার সহধর্মিনীঃ ননী বালা বড়ুয়া, বিবাহকালঃ ১৯৬৪, সন্তানঃ তিন মেয়ে ও এক ছেলে, শিক্ষাঃ স্বশিক্ষিত।

প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহঃ পাগলা ঘোড়া

,ভিজে বেড়াল, চন্দনা রঞ্জনার ছড়া,এলোপাতাড়ি,নানা রঙের দিন, সুকুমার বড়ুয়ার ১০১ টি ছড়া, চিচিং ফাঁক, কিছু না কিছু প্রিয় ছড়া শতক৷ বুদ্ধ চর্চা বিষয়ক ছড়া, ঠুস্ঠাস্ , নদীর খেলা, আরো আছে, ছড়া সমগ্র।

এছাড়া আরও আছে, ঠিক আছে ঠিক আছে, কোয়াল খাইয়া, ছোটদের হাট, লেজ আবিষ্কার , মজার পড়া ১০০ ছড়া, সুকুমার বড়ুয়ার ছড়াসম্ভার -১, সুকুমার বড়ুয়ার ছড়াসম্ভার -২, চন্দনার পাঠশালা, জীবনের ভেতরে বাইরে ইত্যাদি।

সুকুমার বড়ুয়া জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃবাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭), ঢালী মনোয়ার স্মৃতি পুরস্কার, বৌদ্ধ একাডেমী পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭),ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ সম্মাননা, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য সম্মাননা।

এছাড়া, জনকণ্ঠ প্রতিভা সম্মাননা, আলাওল শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯),চোখ সাহিত্য পুরস্কার, ভারত, নন্দিনী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব (শিশু সাহিত্য), আইরিন আফসানা ছড়া পদক, স্বরকল্পন কবি সম্মাননা পদক, শিরি এ্যাওয়ার্ড, শব্দপাঠ পদক, বৌদ্ধ সমিতি যুব সম্মাননা।

আরও আছে, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সম্মাননা, অবসর সাহিত্য পুরস্কার, মোহাম্মদ মোদাব্বের হোসেন আরা স্মৃতি পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, রকিবুল ইসলাম ছড়া পদক, লিমেরিক সোসাইটি পুরস্কার, রাউজান ক্লাব সম্মাননা, কবীর চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০১০) ও একুশে পদক (২০১৭) ইত্যাদি।

আজ তাঁর জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

নওগাঁ #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *