মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধি
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল নো-ম্যানসল্যান্ড পণ্যজট কমাতে ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত”কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল”টি আজ শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
১৪ নভেম্বর বেলা ১২টার দিকে লাল ফিতা কেটে শুভ উদ্বোধনের ঘোষণা দেন অন্তর্বতী সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন,এনডিসি,পিএসসি।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বানিজ্য সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ভেহিকেল রক্ষনাবেক্ষন এবং বেনাপোল বন্দর সহ বেনাপোল-যশোর মহা-সড়কের যানজট নিরসনে দীর্ঘপ্রতিক্ষীত আধুনিক মানের এই টার্মিনালটি নির্মাণে উন্নয়ণের গতিধারা তরান্বিত হলো।
উদ্বোধণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ড. এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন-“বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য সংরক্ষণের জায়গা সংকট রয়েছে। নতুন টার্মিনাল চালু হলে এই সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। বন্দরে ট্রাকের ধারণক্ষমতা কম থাকায় বন্দর জুড়ে লেগে থাকে যানজট।
এতে ব্যহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এমনকি জায়গার অভাবে আমদানিকৃত অধিকাংশ পণ্য রাখা হয় খোলা আকাশের নিচে। পণ্য খালাসের জায়গা সংকটে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় ট্রাক চালকদের।
এমন পরিস্থিতিতে ভেহিকেল টার্মিনালটি চালু হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি বাণিজ্যে গতি ফিরবে, যানজটের কারণে ঠিকমতো পণ্য চালানগুলো আমাদের বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না, সঙ্গত কারণেই আমাদের আমদানি কমে যাচ্ছে”।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে,বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল,পণ্য পারাপার এবং কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল এর জন্য পাশাপাশি ৩টি বৃহৎ আকারের দৃষ্টিনন্দন গেইট নির্মিত হলো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পেট্রাপোল বন্দর সংলগ্নে বেনাপোল বন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শুরু করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
মূল টার্মিনালের শতভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে ভেহিকেল টার্মিনাল প্রকল্পে কাজ করেছেন চারটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে রয়েছে টিবিইএএল, এনডিইএল আরএসএসআইজেভি, ব্যারাক বিল্ডিং, ওপেন ইয়ার্ড ও অপারেশন বিল্ডিং। এই কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি ৪১ একর জমির উপর নির্মিত।
জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১০৯ কোটি এবং নির্মাণকাজ বাবদ ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নবনির্মিত এ টার্মিনালে প্রায় দেড় হাজার ট্রাক রাখার মতো ধারণক্ষমতা রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় পার্কিং ইয়ার্ড, কার্গো ভবন, বন্দরসেবা ভবন, ইউটিলিটি ভবন, ফায়ার স্টেশন, আধুনিক টয়লেট কমপ্লেক্স,ওয়েব্রিজ স্কেল, চিকিৎসা, রান্না ও বিশ্রামের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে।
টার্মিনালটির নির্মাণের বিষয় নিয়ে বেনাপোল বন্দর পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান,”টার্মিনালটি সাজানো হয়েছে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন লাইট, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ দিয়ে। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়।
এটি চালু হলে বন্দরে দীর্ঘদিনের পণ্যজট ও যানজট কমে যাবে এবং বাণিজ্যে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, বন্দরে আসা ট্রাকের মালামাল দ্রুত লোড-আনলোড সম্ভব হবে। এতে করে একদিকে যেমন পণ্যজট ও যানজট কমবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে”।