উজ্জ্বল কুমার সরকারঃ
ছেলেকে পিঠে বেঁধে ইংরেজদের সাথে লড়াই করেছিলেন রানী লক্ষীবাই! বিছিয়ে দিয়েছিলেন বহু ইংরেজদের লাশ। বর্তমানে ভারতের যুবতীরা বলিউডের অভিনেত্রীদের আদর্শ করতে গিয়ে দিশা ভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় নারীদের অবদান পৃথিবী জুড়ে খ্যাতিলাভ করে আসছে। যদিও সেই ইতিহাসগুলি ভারতীয়দের থেকে লুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশি পেছনে না গিয়ে শুধুমাত্র ব্রিটিশ আমলে গেলেই বহু বীরাঙ্গনা নারীর ইতিহাস পাওয়া যায়। এমনি এক নারী ছিলেন ঝাঁসি রাজ্যের রানী লক্ষীবাই। সিপাহী মহাবিদ্রোহ ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ এক চিরস্মরণীয় নাম। বুন্দেলখন্ডের একটি মারাঠা রাজ্য ছিল ঝাসি। ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ- এর জন্ম হয় মহারাষ্ট্রের এক মারাঠী ব্রাহ্মন পরিবারে। তার জন্ম তারিখ ছিল ১৯ নভেম্বর ১৮২৮ সালে কাশীতে। তার পিতার নাম ছিল মরুপান্ত তাম্বে ও মাতার নাম ছিল ভাগীরথী বাঈ তাম্বে।
লক্ষ্মীবাঈ এর মাত্র চার বছর বয়স তখন তার মা তাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। বাড়িতে বসেই শিক্ষালাভ করেন লক্ষ্মী বাঈ। পরে নিজের কন্যাকে মনের মত করে গড়ে তুলেন তার পিতা মরুপান্ত তাম্বে। উষ্ণ হৃদয়ে লক্ষ্মী বাঈ-এর পিতা তাকে ছাবিলি নামেও ডাকতেন। মরুপান্ত তাম্বে মেয়ের বিয়ে দিলেন মারাঠা রাজ্যের রাজা গঙ্গাধর রাও-এর সাথে। গঙ্গাধর রাও-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন লক্ষ্মীবাঈ। বিবাহের আগে তার আরেকটি নাম ছিল মণিকর্ণিকা তাম্বে। কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যান গঙ্গাধর রাও, এদিকে ব্রিটিশরা মারাঠা রাজ্যেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
রাজ্যের রাজা না থাকায় নিজের দেশকে বাঁচাতে, ব্রিটিশদের নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন ঝাঁসির রানী। ১৮৫৭ সালের জুন মাসে ঝাসিতে বিদ্রোহ শুরু হয়। সমস্ত বিদ্রোহীরা ব্রিটিশদের জেল ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করে দেয়। তারপর কাছারি আক্রমন করেন। অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসককে হত্যা করলেন। ঝাসিকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য সমস্ত দায়িত্ব ভার তুলে নিলেন ঝাঁসির রানী। ১৫ হাজারের বেশি একটি বিরাট সৈন্য বাহিনী তৈরি করেন। ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ অনেক রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশের স্বাধীনতার জন্য। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা করেন। ১৮৫৮ সালে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ অনুরোধ করেন মারাঠা বীর তাঁতিয়া টোপিকে। তাঁতিয়া টোপি সহ ২২ হাজার সৈন্য ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ-এর সঙ্গে জড়িত হন এবং ব্রিটিশদের শিবিরে আক্রমন করেন। ২৩ শে মে ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ সেনাপতি হিউরজ এর কাছে তারা কুঞ্চের যুদ্ধে তারা হেরে যান, যার কারনে গোয়ালিয়রকে হাত ছাড়া করতে হয়। এখানে নানা সাহেবও জরিত ছিলেন তাই তাকে পেশোয়া বলে ঘোষণা করা হয়। ১৮ ই জুন ১৮৫৮ সালের যুদ্ধে রানী লক্ষ্মীবাঈ যে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন। মনে হয় একজন পুরুষ মহান যোদ্ধা যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করতে করতে ঝাঁসির রানী যুদ্ধ ক্ষেত্রেই মারা যান।
“একা রানী’র মতো যদি হাজার মহিলা থাকতেন, তবে ব্রিটিশের পক্ষে ভারত দখল করা অসম্ভব ছিল ”- ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পরে এক ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এই কথা এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন।
সেই প্রবন্ধ পড়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু আর এই কথাটিই তাঁর মনে গেঁথে গেছিল। পরবর্তীকালে একথা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের ‘রানী ঝাঁসি বাহিনী’ ব্রিগেডের প্রধান ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন সায়গল’কে।
জন্মদিবসে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী বিরাঙ্গনা রানী।
নওগাঁ #