মোঃমশিয়ার রহমান
নীলফামারী।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা। এ বছর উপজেলায় ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলা শুরু হবে। ফলে এখন কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ভুট্টা গাছের মাথা ও পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজন ভুট্টা গাছের পাতা বিক্রি করে কিছুদিন জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।প্রতি বিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে দুজন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু তা এখন আর লাগছে না। নিম্ন আয়ের লোকজন বিনামূল্যে পাতা ছিঁড়ে ও মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন মাঠে কাজ না থাকায় দিনমজুর শ্রেণির পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা কিনছেন। এতে একদিকে নিম্ন আয়ের লোকজনের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গবাদিপশু খামারিরা পশুর খাদ্য পাচ্ছেন। এছাড়া কৃষকদের ভুট্টা উৎপাদনে খরচও কমে যাচ্ছে।সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার গোলমুন্ডাহাট,কাকরার চৌপুথি,জলঢাকা হাট,পাশ্ববর্তী চাপানী হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতা বিক্রি হচ্ছে।উপজেলার হলদীবাড়ি এলাকার দিনমজুর রহমান বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিদিন সকালে তিস্তা নদীর তীর বর্তী চরে গিয়ে ভুট্টার পাতা ছিঁড়ে নেকবক্ত বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে। পাতার জন্য ক্ষেত মালিকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। কয়েক দিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করব।গোলমুন্ডা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সফিয়ার নামে এক দিনমজুরের ছেলে, যার এখন খেলাধুলা করার কথা কিন্তু তার বাবা-মা সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করছে। বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করতে আসা রাছেল বলেন, বর্তমান কাজকাম কম থাকা,সংসারের অভাব অনাটনের কারনে এই সময়ে সারাদিন ভুট্টা গাছের পাতা ছিড়ে বিকেলে ওই পাতা বাজারে এনে বিক্রি করি।যা আয় আসে তা দিয়ে সংসার কোন মতে চালাই।গোলমুন্ডা বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করতে আসা সর্দি মামুূদ বলেন, বর্তমানে এলাকায় কাজ না থাকায়, ভুট্টার পাতা ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করে যাহা আয় আসে তা দিয়ে কোনমতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খেয়ে বেঁচে আছি। জলঢাকা উপজেলার তিস্তার চর এলাকার কৃষক আমিনুর রহমান জানান, ভুট্টা তোলার ১৫-২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং ভালো হয়। প্রতি বিঘা ভুট্টাক্ষেতের পাতা ও মাথা কাটতে দুজন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু এখন তা লাগছে না। অনেকেই পাতা ও গাছের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের লোকজন তাদের জীবিকা চলার পথ পেয়েছে।গোলমুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এ সময়টায় কাজ না থাকায় চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, ভুট্টার পাতা ও ভুট্টা গাছের মাথা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছু লোকজন কয়েক দিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান পায়। অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশু খামারিরা কম দামে তাদের গোখাদ্য কিনতে পারছেন।