ঢাকামঙ্গলবার , ১২ নভেম্বর ২০২৪

বাংলার কালজয়ী অসংখ্য গানের কণ্ঠশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের আজ শুভ জন্মদিন

উজ্জ্বল কুমার সরকার
নভেম্বর ১২, ২০২৪ ৯:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!
   
                       

 

উজ্জ্বল কুমার সরকার

ন‌ওগা প্রতিনিধি :

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ১৯৪৪ সালে একজন পেশাদার গায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মেগাফোন রেকর্ড সংস্থা থেকে প্রথম বাংলা গানের রেকর্ডিং করেছিলেন। ১৯৪৬ সাল তার জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ছিল, কারণ সেই বছর, তিনি যে কেবল আকাশবাণী (অল ইন্ডিয়া রেডিও)র এআইআর শিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন তাই নয়। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় এইচএমভি – কলম্বিয়া রেকর্ডিং সংস্থার সাথে রেকর্ডিংও শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে, তিনি লাদাখে গিয়ে ভারতীয় সৈনিকদের গান শুনিয়ে প্রচুর আনন্দ দিয়েছিলেন।

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় শ্রী সুশান্ত লাহিড়ী, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষ, সন্তোষ সেনগুপ্ত, অনাদি ঘোষ দস্তিদার ও নীহারবিন্দু সেন সহ সংগীত বঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পীদের কাছে সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন।

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কে বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্র সংগীতের সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র-সংগীত সুরকার সলিল চৌধুরী। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় এবং সলিল চৌধুরীর মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল চল্লিশের দশকের শেষের দিকে। আইপিটিএ তে তাঁদের উভয়ের যাতায়াতের মধ্য দিয়ে। এই জুটি বাঙালি শ্রোতাকে “শ্যামল বরণী ওগো কন্যা”, ” ক্লান্তি নামে গো “, ” একদিন ফিরে যাব চলে “, ” পল্লবিনী গো সঞ্চারিনী ” এবং এইরকম আরো অনেক গান উপহার দিয়েছিলেন। তারা মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুটি কবিতা “রেখো মা দাসের মনে”, “আশার ছলনে ভুলি” নিয়ে কাজ করেছিলেন এবং বিরল এবং সুন্দর সুর করে শুনিয়েছিলেন।

পরে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় মুম্বই গিয়েছিলেন সলিল চৌধুরীর সাথে কাজ করার জন্য। সেখানে তিনি ‘হানিমুন’ (১৯৬০), ‘মায়া’ (১৯৬১), ‘সপন সুহানে’ (১৯৬১) এর মতো হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় লতা মঙ্গেশকরের সাথে বেশকিছু দ্বৈত সংগীত গেয়েছিলেন যা দর্শক শ্রোতাদের নিকট প্রচুর প্রশংসিত হয়েছে এবং ‘মধুমতী’ চলচ্চিত্রে এককভাবে নেপথ্য সঙ্গীত গেয়েছিলেন। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এক গায়ক ছিলেন। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ভাষান্তর করেছিলেন, তারঁ গান শুনে বাংলাএবং এর বাইরের মানুষেরাও রবীন্দ্রসঙ্গীতের শ্রোতা হয়ে গিয়েছিল। তিনি প্রখ্যাত বাংলা ছায়াছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন, এর মধ্যে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোট গল্প ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ সিনেমায়।

এছাড়া ‘সন্ধ্যা রাগ’ (১৯৭৭) ছবির জন্যেও তিনি গান গেয়েছিলেন। দুটি ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন যথাক্রমে বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ এবং পণ্ডিত রবিশঙ্কর। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ‘মহিষাসুর মর্দিনী’ (দানবের ধ্বংস) সঙ্গীতনাটকের অংশ হিসাবে বিখ্যাত ভক্তিমূলক গান ‘জাগো দুর্গা’ পরিবেশন করেছিলেন। এটি আকাশবাণী কলকাতা দ্বারা প্রচারিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান। তিনি অন্যদের মধ্যে, মার্শাল টিটো (যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি), সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ (ভারতের রাষ্ট্রপতি), পণ্ডিত জওহরলাল নেহ্‌রু, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সামনে গান গেয়েছিলেন। কালজয়ী এই গানের কণ্ঠশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ১২ই নভেম্বর ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র সদস্য হিসাবে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ যেমন পোল্যান্ড, রোমানিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, এবং যুগোস্লাভিয়া সফর করেছিলেন। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। ও ভালোবাসা।

নওগাঁ #