মোঃ আনোয়ার হোসেন
ডিমলা, নীলফামারী।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন। এখানেই কালীগঞ্জ গ্রামের ভারত – বাংলাদেশ যৌথ বাঁধ। শুভ্রতার নান্দনিকের ছোঁয়া তিস্তাপাড়ে এবার স্বর্নালী রূপের হাতছানিতে উঁকি দিয়েছে হিমালয় পর্বতের কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধর সৌন্দর্য। পরিষ্কার আকাশে ভোরের সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনো শুভ্র, কখনো গোলাপি আবার কখনও লাল রং নিয়ে হাজির হয় বরফ আচ্ছাদিত এই পর্বত চূড়া। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে এলে তখন রং হয় সাদা।
হিমালয় নেপালের পূর্ব-মধ্য অংশ এবং দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ার হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ অংশ, কালি নদী পূর্ব থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। পরিসরটি নেপালের বেশিরভাগ অংশ দখল করে এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ভারতের সিকিম রাজ্য পর্যন্ত রয়েছে। ইতিহাসের পাতায় বলা হয়েছে নেপাল-তিব্বত সীমান্ত মোটামুটিভাবে রেঞ্জের সর্বোচ্চ অংশের লাইন অনুসরণ করে। এভারেস্ট ২৯,০৩৫ ফুট, কাঞ্চনজঙ্ঘা ২৮,১৬৯ ফুট, মাকালু ২৭,৭৬৬ ফুট, ধৌলাগিরি আই, ৯১৬ ফুট , মানসলু ২৬,৭৮১ ফুট এবং অন্নপূর্ণা ২৬,৫৪৫ ফুট। বলা হয় নেপালের সুদূর পূর্ব প্রান্তে, ভারতের সীমান্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা বিস্তৃত হয়েছে।
প্রকৃতিতে বইছে হেমন্তের পাকা ধানের রং, শীতের আগমনী বরফে কাঞ্চনজঙ্ঘা। পাঁচটি চূড়া থেকেই এই নাম। তবে হিমালয় পর্বত বলেই বেশি পরিচিত। এ বছরের শুভ্রতার নান্দনিকের ছোঁয়া পেয়েছে এই পর্বতশৃঙ্গটি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার মাঝামাঝি ডালিয়া বা দোয়ানী সীমারেখায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। তিব্বতের সালামু হৃদ থেকে নেমে আসা তিস্তা নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেই তিস্তাপাড়ের ডালিয়ায় দাঁড়িয়ে হিমালয় পর্বত বা কাঞ্চনজঙ্ঘা রবিবার স্পষ্ট দেখা গেছে দিনভর। শুধু ডালিয়ায় নয় পানি স্বল্পতায় শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর বালুচরের ওপর দিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘা ছিল পরিষ্কার। খবর নিয়ে জানা গেছে চলতি বছরের ১৭ ও ২৪ অক্টোবর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মাত্র দুইদিন উঁকি দিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা।তেঁতুলিয়ায় উঁকি না দিলেও নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার অংশে তিস্তা নদীর পাড়ে উঁকি দিয়েছে হিমালয় পর্বত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের উত্তরের আকাশে মেঘ না থাকায় ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। সকালে তিস্তা ব্যারাজ এলাকার লোক সমাগম কম হলেও সেখানকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাসেল কাজী ও কালীগঞ্জ যৌথ বাঁধ এলাকার আঃ মান্নান জানান দুই বছর পর এবার হিমালয় দেখতে পেলাম। মোবাইল ফোনে তিনি তুলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি।
তিস্তা পাড়ের বিভিন্ন চর এলাকার বাসিন্দারা এই কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তিস্তা ব্যারাজ থেকে উত্তরের কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় চোখে পড়ে। ডালিয়ার সীমান্ত বাজারের রহিম মিয়া বলেন, তিস্তা ব্যারাজ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে এটা আমরা আগে বিশ্বাস করতাম না। দুই বছর আগে শীতের সময় ও ভাদ্র মাসে পরিষ্কার দেখা যেত। গত বছর দেখা যায়নি। এবার দেখা পেলাম এই প্রথম। এদিকে তিস্তা ব্যারাজের উজানের ডান তীর প্রধান বাঁধের পথ ধরে ২০ কিলোমিটার কালিগঞ্জের ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত হিমালয় দিনভর উঁকি দিয়েছে বলে জানালেন রাসেল মিয়া ও আঃ মান্নান। তিনি জানালেন তিনি বাঁধের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে হিমালয় দেখতে দেখতে তার দিন কেটেছে। টেপাখড়িবাড়ির ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানালেন, দুই বছর পর হিমালয় পর্বত দেখতে পেয়ে আজ খুব আনন্দ পেয়েছি। তিনি জানান, আজ সারা দিন চরের জমিতে কাজ করেছি আর হিমালয়কে দুই চোখে প্রাণ ভরে অবলোকন করেছি। শুধু আমি না এলাকার সকল মানুষ আজ হিমালয় দেখলাম।
তিস্তা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ডিমলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানালেন দুই বছর পর আজ রবিবার হিমালয় উত্তর পশ্চিম কোণে সারাদিন দেখা গিয়েছে। এলাকার মানুষজন আজ হিমালয় উপভোগ করল। এমন পরিষ্কার আকাশ থাকলে প্রতিদিন দেখা যাবে এই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।