নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
বিদায় নিচ্ছে শীত। গাছে গাছে সবুজ পাতা। ফসলের মাঠ সবুজে ছেয়ে আছে। মৃদু হাওয়া বইছে। নাকে ভেসে আসছে শিমুল ফুলের ঘ্রাণ। নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার প্রকৃতিতে এখন এমনি রুপ।প্রকৃতিতে বইছে দখিনা বাতাস।কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। শিমুল ফুলে এখন বসন্তের হাসি।ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে উঠে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল।দূর থেকে হঠাৎ দেখলে ঠিক মনে হবে কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন।নিঃসঙ্গ যুগে যুগে শিমুল ফুল নিয়ে গান, গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখেছেন অনেক সাহিত্যিক।
বাংলাদেশে এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে শিমুল ফুলের দেখা পাওয়া যাবে না।উপজেলার বিভিন্ন পাকা সড়ক কিংবা কাচা রাস্তার দুই পাশে সারি সারি কিংবা বাঁশ ঝাড়ের ফাঁকে দাঁড়িয়ে উকি দিচ্ছে শিমুলের গাছ, এ যেন অনন্য এক সৌন্দর্য।গাছে, গাছে ফুটে আছে শিমুল ফুল।চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই ফুলের পাগল করা সৌন্দয্যর কিরন। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মনোমুগ্ধকর মৌ মৌ গন্ধ ও সৌন্দর্য্য।যে গন্ধ ও সৌন্দর্য্য মানুষের মনকে করে তুলে বিমোহিত।সেই সাথে পাখিরাও যেন সেই প্রকৃতির ছোঁয়া নিচ্ছে।তাই শিমুল ফুলের কাছে বেশিই কদর বেড়েছে পাখির। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,শিমুল ফুল শুধু সৌন্দর্য্য ছড়ায় না,আমাদের আরামদায়ক বিছানায় শিমুলের তুলা বেশ অতুলনীয়।কিন্তু কালের বিবর্তনে জলঢাকার ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়। এক যুগ আগেও এ উপজেলাসহ গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তায়, পতিত ভিটায় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিত,এসেছে বসন্ত।প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ।
জানা যায়, এ গাছের সব অংশেই রয়েছে ভেষজগুণ।শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই নতুন গাছের পুনরায় জন্ম হয়।অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না। নেওয়া হয় না কোনো যত্ন। প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বর্তমানে এ গাছ কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে মানুষ। অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ।বিভিন্ন সূত্র হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে শিমুল তুলা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, আর গার্মেন্টের জুট দিয়ে তৈরি তুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাপাশ তুলা ২৫০ এবং পজ্ঞের তুলা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।বন ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্যিকভাবে এখন দেশের কোথাও এই শিমুলগাছ বা তুলা চাষ করা হয় না।
এটি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। যার কারণে শিমুলগাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর তুলা খুবই ভালো এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে মানুষ আসল তুলার মর্ম বুঝত।গ্রামে শিমূল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছের। প্রতিনিয়ত বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ। যার কারণে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, অতি চিরচেনা এই শিমুল গাছ